জকিগঞ্জ মোহনা থেকে সকল দর্শকবৃন্দকে জানাচ্ছি অভিনন্দন, ইতিহাস ঐতিহ্য সংবাদ সম্ভবনা নিয়ে আমরা আছি আপনার সাথে। আপনিও আমাদের সাথে থাকুন নতুন কিছু জানার জন্য। দর্শক আজ আমরা এসেছি শাহ শিতালং রহঃ এর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে।
বর্তমান প্রজন্ম শাহ শিতালং সম্পর্কে খুব একটা জানেনা এবং তার লিখিত মরমী কবিতা সম্পর্কেও বর্তমান প্রজন্মের কোন আগ্রহ নেই। আমি ছোটবেলা আমার বাবার মুখে শুনতাম শিতালং শাহের মরমী কবিতা যেমন- ও ভাই সর্বনাশরে বাক্য বিড়ম্বন, প্রকাশিত মিথ্যা হইলো লোকের আচরণ, আরও আছে যেমন শুয়া উড়িলো উড়িলো উড়িলোরে জীবের জীবন শুয়া উড়িলোরে ইত্যাদি। আজ আমরা জানতে চলেছি শাহ শিতালং সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকুন।
১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তৎকালীন সিলেট জেলার করিমগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত বদরপুর থানার খিত্তাশিলচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ জাঁহা বখশ মুনশি, মাতার নাম সুরতজান বিবি। তাঁর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। তাঁর দীক্ষাগুরু মাওলানা আব্দুল ওহাব তাঁকে শিতালং শাহ নাম দেন। উল্লেখ্য শিতালং শব্দটি ফারসি এবং এর অর্থ ‘পায়ের গোড়ালির গিরা।
জনশ্রুতি আছে, শিতালং-এর পিতা জাঁহা বখশ মুনশি ছিলেন ঢাকার নবাব বংশের লোক। ব্যবসায়ের সূত্রে তিনি সিলেটের করিমগঞ্জ অঞ্চলে আসেন। নৌকা ডুবিতে তাঁর পণ্য বিনষ্ট হওয়ার ফলে তিনি খিত্তাশিলচরের জমিদার মীর মাহমুদের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। জাঁহা বখশের গুণে মুগ্ধ হয়ে মীর মাহমুদ তাঁর কন্যা সুরতজান বিবিকে জাঁহা বখশের সাথে বিয়ে দেন। পরবর্তী কালে জমিদার মীর মাহমুদ তার জামাতাকে তারিণীপুরে বেশ কিছু ভূ-সম্পত্তি দান করেন। এই সূত্রে জাঁহা বখস এই অঞ্চলের শ্রীগৌরী মৌজায় বসবাস শুরু করেন করেন। শিতালং-এর জন্যের পর, জাঁহা বখস বাছাড় জেলার তারিণীপুর গ্রামে বসবাসের জন্য চলে আসেন। উল্লেখ্য জাঁহা বখসের কনিষ্ঠ পুত্রের অধঃস্থন বংশধর বর্তমানে তারিণীপুরে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।
শিতালং শাহের লেখাপড়া শুরু হয় তারিণীপুর মক্তবে। এরপর তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি কোরান হাদিসের উপর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময় মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও মুর্শিদ শাহ সুফি আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী ও অন্য শিক্ষক আব্দুল কাহিরের কাছে বিশেষ ধরনের আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন। তবে তাঁর দীক্ষাগুরু ছিলেন আব্দুল ওয়াহাব। এক পর্যায়ে গুরুর নির্দেশে শিতালং শাহ লাউড়ের ভুবন পাহাড়ে নির্জনে আধ্যাত্মিক সাধনা করেন। প্রায় দশ বৎসর পর তিনি সাধনা শেষ করে ফিরে এসে গুরুর আদেশে, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং মানব কল্যানের বাণী প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এই সময় তিনি তাঁর দর্শন এবং আদর্শের সূত্রে গান রচনা করতে থাকেন। তাঁর গানগুলো তাঁর শিষ্য আসগর আলি লিপিবদ্ধ করেন। শেষ বয়সে তিনি আসাম রেলের ভাঙ্গা স্টেশনের নিকটবর্তী মৌজায় বসবাস শুরু করেন। আর এখানেই তিনি ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না……. রাজিউন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আজও ভক্তবৃন্দ আসেন এই মহান মরমী কবি ও সুফির কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে।