নিউজ অব জকিগঞ্জঃ
নাম ইব্রাহিম আলী, তবে সবার কাছে তিনি ‘সর্পরাজ ইব্রাহিম’ হিসেবে পরিচিত। বিষাক্ত সাপ ভালোবেসে সঙ্গী করে যিনি পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৩০টি বছর। সাপ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এখনও সাপের সন্ধানে ছুটে বেড়ান দেশের এক প্রান্তে থেকে অপর প্রান্তে। সেই সাথে লতা-পাতা দিয়ে নিজের তৈরি রোগ নিরাময়কারী ভেষজ দিয়ে মানুষের উপকার করে আসছেন তিনি। তার এরকম চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন সরকারি থেকে বেসরকারি কর্মকর্তারাও।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিমের জন্ম ভারতের আসাম রাজ্যে হজাই এলাকায়। তার পিতা তাহের আলীও ছিলেন একজন ওঝা ও কবিরাজ। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে গুণমন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন তিনি। পরে ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ কামাখ্যায় (পানামং মায়ারাজ্য) সর্পবিদ্যা ও তন্ত্র-মন্ত্রে একাধারে ১৮ বছর প্রশিক্ষণ নেন। তার গুরু আসামের সামলাল গারওয়ালি নেংটা নাগার কাছ থেকে গুণমন্ত্র শিখেন ইব্রাহিম। এরপর থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে দিয়ে যান মানুষকে সেবা। যেখানেই বিষাক্ত সাপের দেখা পাওয়া যেত সেখানেই ডাক পড়তো ইব্রাহিম আলীর। তিনি দাবি করেন যেকোন সাপ তিনি কোন রকমের লাঠি বা কোন কিছু সহায়তা ছাড়াই ধরে ফেলতে পারেন। ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থানের পর চলে আসেন বাংলাদেশে। সিলেটের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাপ ধরতে থাকেন তিনি, তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, এমনকি প্রশাসনের প্রয়োজনেও ডাক পেয়েছেন। তবে তিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জে চলে এসেছেন তিনি।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পরফুল্য মহন্তও তার কাজের প্রশংসা করেছেন, দিয়েছিলেন প্রশংসাপত্রও। তিনি সেখানে লিখেছিলেন- সর্পরাজ ইব্রাহিম আলী একজন সৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ লোক।
ইব্রাহিম আলী এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিষধর সাপ কিং কোবরা, ব্লাক কোবরা, পংকি আলদ, সূর্যমুখী, মাছুয়া আলদ, গাছুয়া আলদ, দুধরাজ, কেরেট আলদ, গ্রিন ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ধরে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। যে কোন প্রজাতির সাপ নিজের বশে আনতে ইব্রাহিম পারদর্শী।
তার শিষ্য নাহিদুল আহমেদ বলেন, উনি আমার গুরু, উনার কাছ থেকে আমি সর্পবিদ্যা শিখে যাচ্ছি। এছাড়া তিনি গুণমন্ত্রের মধ্য থেকে মানুষের বিভিন্ন রোগ সারিয়ে দেন। এছাড়া মানসিক অশান্তি, পারিবারিক অশান্তির সমাধানও তিনি করতে পারেন। যার জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না।
সর্পরাজ ইব্রাহিম আলী বলেন, সাপকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাপ কারো ক্ষতি করে না। ওরা আমাদের বন্ধু। তাই সাপেরা অনেক সময় মানুষের বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে। ভয়ে অনেকেই বাড়ির বাইরে থাকেন, কেউ আবার মেরে ফেলেন, এসব করবেন না। আমাদের খবর দিন, আমরা বিনামূল্যে সাপ ধরে দিব। তবুও তাদের ক্ষতি করবেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি এই জীবনে এসেছি ৩০ বছর হয়ে গেছে। নিজের বয়স এখন ৬০ এর উপরে। যৌবনের ১৮ বছর চলে গেল শিক্ষায়। তবে এ পেশায় আসার পর অনেক কথা শুনেছি মানুষের। তবে আমি হেরে যায়নি। বর্তমানে আল্লাহর রহমতে অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন। এখন আমি সুনামগঞ্জে এসেছি, বাড়ি করেছি এবং এখানেই অবস্থান করছি। কারো প্রয়োজন হলে আমাকে অবশ্যই পাবেন। আমি আপনাদের সবার সেবা দিতেই এসেছি।
গতকাল জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারে ফারহানা ভেরাইটিজ ষ্টোরে এসে একটি বিষাক্ত সাপ ধরেন, সেই সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয়। আপনারা যেকোন সমস্যায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, তার মোবাইল নাম্বারঃ 01748052831 অথবা 01747-315881