গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে দেওয়া শাকিব খানের সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে বুবলীর বিরুদ্ধে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দিলেন বুবলী। তাঁর অভিযোগ খন্ডানো কথা পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন- শামছুল হক রাসেল
সম্পর্ক এখনো রয়েছে। এই প্রমাণ আপনাকেই দিতে বলেছেন শাকিব। কী বলবেন?
বিষয়টা নিয়ে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাধছে। দেখুন, একটা সম্পর্ক-বিয়ে-সন্তান এগুলো খুব পবিত্র একটি জিনিস। এটাকে যে নোংরাভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাঁকে নিয়ে আমার সত্যি বারবার কথা বলার আগ্রহ নেই।
একজন মেয়ে হিসেবে বিয়ের পর সবসময় আমি চেয়েছি সুন্দরভাবে সংসার করতে, যেটা আপনারা অনেকবার দেখেছেন। আর এই সংসার করতে চাওয়াটাই আমার কাল হলো। এ ছাড়া কোনো স্বামী-স্ত্রী যদি আলাদা হয়ে যায় তাহলে তাঁরা হয় সেপারেটেড না হলে ডিভোর্সড। আমি সেটাই বলেছি যে, ডিভোর্স হলে তো ডিভোর্স লেটার থাকবে। আমি তা পাইনি। তার মানে আমাদের সম্পর্কটা আসলে এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আপনারাই বলুন। আমি কী এখন এটাকে- সেপারেটেড নাকি ডিভোর্সড বলব?
শাকিবকে নাকি ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করেছেন এবং অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন…
এটা খুবই হাস্যকর আর কমন একটা কথা। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তো আরও বেশি। কারণ কোনো পুরুষ কোনো মেয়েকে অপমান করতে চাইলে বা হেয় করতে চাইলে সবার আগে মেয়েটিকে তার চরিত্র নিয়ে আঘাত করে। কারণ, এটার কোনো প্রমাণ দরকার হয় না জাস্ট বলে দিলেই হয় যেটা খুব বাজে মানসিকতার পরিচয়।
আমি অনেক বছর ফিল্মে কাজ করি, তার আগে নিউজ প্রেজেন্টার ছিলাম। কেউ কখনো আমাকে নিয়ে বাজে রিউমার পায়নি। কোথাও কোনো আড্ডাতেও আমাকে দেখে না। কারণ আমি ওভাবেই আমার জীবন ধারণ করি। তাছাড়া সবাই এটা খুব ভালোভাবেই জানেন। না হলে আপনারা এত বছর তো আমাকে দেখছেন, জানেন, কখনো তো এমন কিছু পাননি বা লিখলেন না কারণ আমার বেসিকটা কখনোই উগ্র ধরনের জীবনযাপনের নয়। আর তাঁকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে এটা তাঁর খুব পছন্দের শব্দ মনে হয়। তাঁর জীবনের অনেক ক্ষেত্রে তিনি এটা খুব ব্যবহার করেন যেটা দিয়ে উনি কী বোঝান সেটা উনি নিজেই হয়তো জানেন। নাহলে তাঁর মতো ম্যাচিউর একজন মানুষকে কীভাবে কেউ ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করতে পারে!
শাকিব প্রশ্ন তুলেছেন আপনার ফ্ল্যাট ও গাড়ি নিয়েও-
দেখুন আমি অনেক বছর ফিল্ম করছি, তার আগে নিউজ পড়েছি, অনেক কালচারাল প্রোগ্রাম করি, বিভিন্ন ওপেনিং শো করি, বিজ্ঞাপন করি, এত বছর সম্মানের সঙ্গে কাজ করে আমার নিজ সামর্থ্য আর পরিবারের হেল্প নিয়ে যতটুকু থাকার ঠিক ততটুকুই আছে। আমার গাড়ির কথা উনি বলছেন সেটা ব্যাংক লোন নিয়ে নেওয়া। সব লোনের কাগজ আমার কাছে আছে। যে শোরুম থেকে নেওয়া সেই শোরুম উনি নিজেও চিনেন। আমার বাসার কথা উনি বলেছেন যেটাতে আমি আম্মু, আব্বু, শেহজাদ, আমার ছোট ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকি। এই বাসা আমার নামেও না, কারণ এটাও লোন নিয়ে করা। আমি আমার ফিল্ম আর বিজ্ঞাপন থেকে কিছু টাকা দিয়ে কিছুটা পরিবার থেকে হেল্প নিয়ে বাকিটা লোন করে গাড়ি কিনেছি। গাড়ি আর বাসার প্রতি মাসের ইনস্টলমেন্টের হিসাব আমার কাছে আছে। আমি এত বছর কাজ করে লোন করে কিছু করতে গেলেও সমস্যা?
আমার আর সন্তানের জন্য তো আমাকে কাজ করতে হয় কারণ সব দায়িত্ব আমার একার। উনি এসবেও নোংরামি করতে চান? তাহলে নিজে কেন কোনো দায়িত্ব নেননি?
আপনি জোর করে ঈদের দিন শাকিবের বাসায় গিয়ে উঠেছেন। এমনটাই বলেছেন তিনি…
সবার আগে আমার কাছে ব্যক্তিত্ব, তার পর অন্য কিছু। আমার নিজেরও তো আত্মসম্মানবোধ আছে, জোর করে কেন যাব? আমি কখনো জোর করে তাঁর বাসায় যাইনি, আমি ওই ধরনের মানুষই নই। শেহজাদকে নিয়ে আমি তাঁর ইচ্ছাতেই ওই বাসায় যেতাম। আর শেহজাদকে কখনো একা ন্যানি দিয়ে পাঠাইনি। ওখানে সবসময় আমিই নিয়ে যাই, ন্যানি সঙ্গে থাকে। আর উনি বললেন, তাঁর বাসায় নাকি কী সিনক্রিয়েট করে আমাকে বের করে দিয়েছে। আমার সঙ্গে কে নাকি খারাপ ব্যবহারও করেছে? এটার তো প্রশ্নই ওঠে না, চাইলে আপনারা তাঁর ওখানে সিসি ক্যামেরা চেক করেন। তিনি তো দূরের কথা, তাঁর সামনে কেউ আমার সঙ্গে বাজে সিনক্রিয়েট করার সাহস নেই। ওরকম হলে তিনি নিজেই তাদের বকা দিতেন।
প্রিয়তমা ছবিতে আপনাকে না নেওয়ায় আপনি আবোলতাবোল বকছেন, এমনটাই অভিযোগ…
কীসের প্রিয়তমা? এই প্রিয়তমা নিয়ে তো আমি কোনো কথাই বলিনি, বা বলছি না। উনি নিজেই তো কদিন পরপর আমাকে নিয়ে আবোলতাবোল ভুলভাল বকছেন। আপনারা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। নাকি প্রিয়তমা সিনেমা নিয়ে কথা বলছি না দেখে তাঁর খারাপ লাগছে? এই সিনেমা নিয়ে পাঁচ বছর আগে যখন পরিচালক কথা বলেছেন, ফাইনাল করেছেন এবং সিনেমার নাম প্রিয়তমাটাও সেসময় ঠিক করেছেন। সেখান থেকে কোনো কারণে হয়ে ওঠেনি আমার কাজ করা, তাঁরা যেটা ভালো ভেবেছেন করেছেন। তারপরও কেন আমাকে নিয়ে বারবার টানছে এসবে? আমি তো কিছু বলছি না।
শাকিবের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কী?
তাঁর উদ্দেশে আর কিছু বলতে চাই না। কারণ সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে তিনি তাঁর সন্তানের মাকে নিয়ে যে নোংরাভাবে মিথ্যাচার করছেন, যে বাজেভাবে কথা বলছেন, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছেন, মানহানির চেষ্টা করছেন- তার সব কিছুর প্রমাণ আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। আমি কীভাবে তাঁকে সম্মান দিয়ে কথা বলি এবং তিনি কীভাবে আমাকে অসম্মান করছেন। এ ছাড়া পূর্বের সব বিষয় অস্বীকার করে নানান গল্প বলছেন তাও আপনারা দেখছেন। এসব আমাকে এবং সন্তানকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। কারণ আমি মা হিসেবে মানসিকভাবে ভালো না থাকলে আমার সন্তানের ওপরও তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এটা নিয়ে শিগগিরই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। কারণ এই মানহানি আমার একার নয়, সন্তানেরও।